হাদীস এবং কোরআন দুইই পরস্পর নিবিড় সম্পর্কে অন্বিত । কোরআন মজিদ দীন ইসলামের মুল সংবিধান, হাদীস তার ব্যাখ্যা । মুসলমানদের ইহকাল ও পরকালের সুষ্ঠ জীবন-পরিচালনার উদ্দেশ্যে সকল বাদশাহীর বাদশাহ্ আল্লাহ তা’আলা যে সংবিধান বা শাহী ফরমান প্রেরণ করেছেন তারই নাম কোরআনুল কারীম । কোরআন মাজিদের প্রথম অবর্তীর্ণ বাণী ‘ইকরা’- যার অর্থ’ পাঠ কর । ঐ ইকরা থেকেই ‘কোরআন’ একটি পঠনীয় গ্রন্থ। ‘কোরআন নামটি স্বয়ং আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত । কোরআনুল কারিম সমস্যাসঙ্কুল মানব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ অবশ্য পঠনীয় সুমহান গ্রন্থ । সংবিধান বা শাহী ফরমান সূত্রাকার ও সংপ্তিই হয় । সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চলার পথে উপযুক্ত রাজপ্রতিনিধি তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন । আমাদের প্রিয় নবী এবং মহান পথপ্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তা’আলার সেই সুত্রাকার সংবিধান-বাণী কোরআনুল কারীম আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে’ বুঝিয়েছেন। এই ব্যাখ্যারই নাম হাদীস । আল্লাহ-র প্রেরিত পয়গাম্বরের ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ ও সংবিধানকে উপযুক্তভাবে মর্যাদা দান করা বা তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হত না ।
শুধু তাই নয়, নবীগণের ব্যাখ্যা ব্যতীত আমরা আল্লাহর আদেশ অনুসরণ করতে গিয়ে হয়তো অনেক সময় আল্লাহর আদেশ-বিরুদ্ধ কাজই করে বসতে পারতাম । বিষয়টি একটা উদাহরণের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তা’আলা আদেশ করেছেন, ‘যারাই স্বর্ণ রৌপ্য জমিয়ে রাখবে, আল্লাহর পথে ব্যয় করবে না, তাদের ভীষণ শাস্তি ভোগ করতে হবে ।’ এ আদেশের সাধারণ অর্থ, স্বর্ণরৌপ্যমাত্রই আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে । সঞ্চয় না করলে মানুষ দান করবে কি করে ফেৎরা দেবে কি করে, জাকাত দেবে কি করে? জাকাত তো নামাজ রোজার মতই ফরজ । যাকাতের বিধানের মাধ্যমে বৈধভাবে অর্জিত সম্পদ সংরনের অনুমতি দেয়া হয়েছে । সুতরাং নিঃসন্দেহে বোঝা যেতে পারে আল্লাহ্ তা’আলার উক্ত আদেশের অর্থ সঞ্চয় করতে নিষেধ করা নয় । কোরআনুল কারীমের উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই বলেন, ‘যে সব ধনসম্পদের জাকাত আদায় করা হয় তা উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্যের আওতাভুক্ত নয় । অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাখ্যা করে বলেন যে নির্ধারিত পরিমান জাকাত (Poor-Tax) আদায় করা হলে সোনা-রুপা তথা সর্বপ্রকার ধনসম্পদ সঞ্চয় করা ইসলামী বিধান মতে হালাল বা বৈধ । আর এ জন্যেই হাদীস শরীফকে কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা বলা হয় । কোরআনুল কারীমের যে কথাটা সংক্ষিপ্ত সূত্রাকারে ফুটি-ফুটি করছে, হাদীস শরীফ তার পাপড়িগুলোকে একটা একটা করে ফুটিয়ে শতদলের মত বিকশিত করেছে । হাদীস যে আল্লাহর বাণী কোরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা সে প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ তা’লাও বলেছেন-
আল্লাহ্ তা’আলা আরববাসীদের মধ্য থেকে এমন একজন রসূল পাঠিয়েছেন যিনি তাদের আল্লাহর বাণী সমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদের পবিত্র করবেন, তাদের আল্লাহর গ্রন্থ কোরআন এবং হেকমত শিক্ষাদান করবেন । অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন শিক্ষাদান করার সঙ্গে সঙ্গে কোরআনের হেকমত বা গভীর তত্ত্ব এবং আল্লাহর বিধিবিধান মানব সাধারণকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবেন । আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনগড়া কথা না বলে এই ভাবে কেবল আল্লাহর বাণী বা কোআনেরই ব্যাখ্যা করবেন এবং নিজের জীবনে সেই কোরআনের আদর্শকেই রুপায়িত করবেন বলেই, পবিত্র কোরআনে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ‘নবী নিজের মন থেকে বানিয়ে কিছু বলেন না, তিনি যা কিছু বলেন সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অহীপ্রাপ্ত হয়ে সেই অহীর (অর্থাৎ প্রত্যাদেশের) বিকাশ সাধন করেন মাত্র ।
তাই হাদীস ও কোরআনের মধ্যে কোথাও কোন যথার্থ বিরোধ নেই । যদি কখনো কোন বিষয় সম্পর্কে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে ব্যাখ্যার কোথাও আমাদের ভুল হচ্ছে অথবা কোরআন-বিরূদ্ধ ঐ হাদীস জাল, যয়ীফ, মিথ্যা বা বানোয়াট, অতএব তা পরিত্যাজ্য । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই বলেন, আমার বাক্য আল্লাহর বাক্যকে বাতিল করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহর বাক্য আমার বাক্যকে বাতিল করতে পারে ।’
Thursday, January 24, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment