হাদীস রাসূলের মনগড়া বক্তব্য নয় । কুরআন ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার অহী তাঁর প্রতি নাযিল হতো । মূলত সেগুলোই হাদীস বা সুন্নায় প্রতিফলিত হয়েছে। কুরআনুল কারিমে পরিষ্কার বলা হয়েছে :
“তিনি (মুহাম্মদ রাসূল) নিজের ইচ্ছামত কোনো কথা বলেন না। তিনি যা কিছু বলেন সবই আল্লাহর অহী ।” সুরা আন নজম (৩-৪)
এ জন্যেই হাদীসকে বাদ দিয়ে ইসলামের অট্টালিকা নির্মিত হতে পারে না। হাদীস ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংগ । কুরআন এবং হাদীস উভয়টাই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ভিত ।
হাদীস ও সুন্নাতের গুরুত্ব সম্পর্কে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তোমাদের কাছে আমি দুটো বিষয় রেখে গেলাম-আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ । এ দুটোকে আঁকড়ে ধরে থাকলে-তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না ।”
একথাও আমাদের সকলেরই জানা আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস ভান্ডারের মধ্যেই সন্নিবেশিত রয়েছে তাঁর সুন্নাহ । হাদীসে রাসূল থেকেই জানা যায় সুন্নাতে রাসূল । মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো স্পষ্টই বলেছেন যে, কুরআন এবং সুন্নাতে রাসূলকে আঁকড়ে ধরতে হবে । আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলকে একথাও জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যে ,
“হে নবী, বলে দাও : তোমরা যদি সত্যি আল্লাহকে ভালবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলেই আল্লাহ্ তোমাদের ভাল বাসবেন ।” (আল ইমরানঃ ৩১)
রাসূলের অনুসরণ করতে হলে রাসূলের দিয়ে যাওয়া কুরআনকে গ্রহণ করার সাথে সাথে তাঁর সুন্নাহকেও গ্রহণ করতে হবে । কারণ সুন্নাহ বা হাদীস তো কুরআনেরই ব্যাখ্যাঃ
“আমি তোমার কাছে যিকর (কুরআন) নাযিল করেছি, যেনো তুমি তাদের প্রতি যা নাযিল করা হলো, তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও।” (আন নহলঃ ৪৪)
তাছাড়া কুরআনের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট করেই বলে দেয়া হয়েছে যেঃ
“আল্লাহ্র আনুগত্য করো আর রাসূলের ।” (আলে ইমরানঃ ৩২)
একজন মুসলিমকে যেমন কুরআন মানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে, তেমনি কুরআনের পরেই তাকে সত্যিকার মুসলিম হবার জন্যে হাদীস জানতে হবে এবং মানতে হবে ।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন, সুন্নাতে রাসূল হলোঃ
১. কুরআনে যা আছে তাই, কিংবা
২. কুরআনেরই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অথবা
৩. কুরআনে নেই, অথচ মুমিনদের কর্তব্য এমন জিনিস ।
এ কারণেই ইসলামী শরীয়ার উৎস হিসেবে হাদীস বা সুন্নাতে রাসূলকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করল ।” (আন নিসাঃ ৬৯)
হাদীস যেভাবে সংরতি হয়েছে ।
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা হাদীস ভান্ডার তিনটি নির্ভরযোগ্য পন্থায় হিফাযত ও সংরতি হয়ে আসছে
১. উম্মতের আমল ও বাস্তব অনুসরণের মাধ্যম ।
২. লেখা, মুখস্তকরণ ও গ্রন্থাবদ্ধ করণের মাধ্যম ।
৩. শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যম ।
এই তিনটি পন্থায় রাসূলে করীমের সমস্ত হাদীস হিফাযত ও সংরতি হয়েছে । সমস্ত হাদীস সংকলিত ও সংরতি হয়ে যাওয়ার পর বর্ণনা ও বিষয়বস্তুর ব্যাপক পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকৃত হাদীসের সংগে যেসব ভুল তথ্য ও মনগড়া কথা ঢুকে পড়েছিল সেগুলোকে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে । বিষয়টি আরেকটু খুলে বুঝার জন্য এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও হাদীস সংকলনের ইতিহাস তুলে ধরা প্রয়োজন ।
No comments:
Post a Comment