Tuesday, January 29, 2008

হাদীস সংকলনের ইতিহাস --- প্রথম যুগ

মোটকথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকে নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে শুরু না হলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে হাদীস সংরক্ষনের কাজ শুরু হয় । হিজরী প্রথম শতকের শেষ অবধি যে রচনাগুলো পাওয়া যায় তার বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলোঃ

১) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইবনুল আস (রা) যে নোট বইতে রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসগুলো লিপিবদ্ধ করেন তার নাম দেন তিনি ‘সহীফায়ে সাদেকাহ’ । এতে প্রায় এক হাজারটি হাদীস ছিল । দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁর পরিবারবর্গের কাছে তা সংরক্ষিত ছিল । বর্তমানে মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের মধ্যে এর সবগুলো হাদীসই পাওয়া যাবে ।

২) হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর শ্রেষ্ঠ ছাত্র হাম্মাম ইবন মুনাব্বাহ (মৃত্যু ১০১ হিজরী) তাঁর রেওয়াতগুলো লিখে নিয়েছিলেন । এ গ্রন্থটির নাম হচ্ছে ‘সহীফায়ে সহীহা’ । এর হাতে লিখা পান্ডুলিপি বর্তমানে দামেশকে ও বার্লিনের লাইব্রেরীতে সংরতি রয়েছে । এ ছাড়া ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল তাঁর মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে আবু হুরায়রার রেওয়াত শিরোনামে এর সবগুলোই উদ্ধৃত করেছেন । এ সহীফাটি হচ্ছে হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসের একটি অংশ । এর অধিকাংশ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে পাওয়া যাবে ।

৩) হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর একজন ছাত্র বশীর ইবন নুহাইকও তাঁর বর্ণিত হাদীসের আর একটি সংকলন করেন । বিদায় নেবার সময় তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর সামনে তা সম্পূর্ণ পাঠ করে তাঁর কাছ থেকে সত্যায়িত করে নেন ।

৪) সাহাবাদের আমলেই আবু হুরায়রার মুসনাদ নামে আর একটি গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়েছিল । হযরত উমর ইবন আব্দুল আজীযের পিতা মিসরের গভর্ণর আব্দুল আযীয ইবন মারওয়ানের (মৃত্যু ৮৬ হিজরী) কাছেও তাঁর একটি কপি ছিল । আব্দুল আযীয কাসীর ইবন মুররাকে লিখেন, “তোমার কাছে সাহাবায়ে কিরামের যে হাদীসগুলো আছে তা লিখিত আকারে আমার কাছে পাঠাও, তবে হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর রেওয়ায়াতগুলো ছাড়া । কারণ সেগুলো আমার কাছে লিখিত আকারে আছে ।” (তাবাকাতে ইবন সা’দ, ৭ম খন্ড, ১৫৭ পৃঃ উদ্ধৃতি ইন্তিখাবে হাদীস, আব্দুল গফ্ফার হাসান, ১৮ পৃঃ) ।

ইমাম ইবন তাইমিয়ার হাতে লিখা মুসনাদে আবু হুরায়রার একটি কপি বর্তমানে জার্মানীর লাইব্রেরীতেও সংরতি আছে ।

৫) হযরত আলী (রা) যে হাদীসগুলো লিখে রাখেন তার নাম দেয়া হয় ‘সহীফায়ে আলী’ ।

৬) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় যে দীর্ঘ ভাষণ দান করেন আবু শাহ ইয়ামানীর আবেদনক্রমে তা লিখিত আকারে তাঁকে দেয়ার নির্দেশ দেন । মানবতার অধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

৭) হযরত জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ (রা) এর রেওয়ায়াতগুলো তাঁর দু’ছাত্র ওহাব ইব্ন মুনাব্বাহ (মৃত্যু ১১০ হিজরী) ও সুলায়মান ইবন কায়েস লশকরী লিপিবদ্ধ করেন । এতে ছিল হজ্জের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বিদায় হজ্জের ভাষণ ।

৮) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা)-এর রেওয়ায়াতগুলো তাঁর ভাগ্নে ও ছাত্র উরওয়া ইবন যুবাইর লিপিবদ্ধ করে নেন ।

৯) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসগুলো বিভিন্নভাবে সংকলিত হয় । সাঈদ ইবন যুবায়ের তাবেঈর কাছে এর একটি সংকলন ছিল ।

১০) হযরত আনাস (রা)-এর কাছে হাদীসের একটি লিখিত সংকলন ছিল । সাঈদ ইবন হিলাল বলেন, হযরত আনাস (রা) নিজের হাতে লিখা সংকলনটি বের করে আমাদের দেখাতেন এবং বলতেনঃ এগুলো আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং এগুলো লিখে নেবার পর তাঁকে শুনিয়ে সত্যায়িত করেছি ।

১১) হযরত আমর ইবন হাযম (রা)-কে ইয়ামানে গভর্ণর করে পাঠাবার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো ২১ টি ফরমান সংযুক্ত করে বেশ বড় বিতাব বানিয়ে ফেলেন ।

১২) হযরত মাসুরা ইবন জুনদুব (রা)-ও তাঁর রেওয়ায়াতগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলেন । তাঁর পুত্র উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন । এটি ছিল হাদীসের একটি বিরাট সংকলন । ইবন হাজার আসকালানী তাঁর ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে এর উল্লেখ করেছেন ।

১৩) হযরত সা’দ ইবন উবাদাহ (রা) জহেলী যুগ থেকে লেখাপড়া জানতেন । তিনিও তাঁর রেওয়ায়াতগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলেন ।

১৪) তাবকাতে ইবন সা’দ সুলায়মান মুসার একটি উদ্ধুতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) বলে যেতেন এবং না’ফে তা লিখে নিতেন । হাদীসের এ সংকলনটির নাম ‘মাকতুবাতে হযরত না’ফে ।

১৫) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রা) তার রেওয়ায়াতগুলো লিখে ফেলেন । মা’আন বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা)-এর পুত্র আব্দুর রহমান আমার সামনে কিতাব বের করে কসম খেয়ে বলেন, এ হাদীসগুলো আমার পিতা আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদের লেখা ।

No comments: