Sunday, February 3, 2008

ঈমান, ঈমানের তাৎপর্য এবং মু’মীনের বৈশিষ্ট্য

মুসলিম-১ : আবু খায়সামা যুহায়র ইব্ন হারব (র) .......... ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার (র) থেকে বর্ণনা করেন । তিনি (ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার) বলেন, সর্বপ্রথম ‘কাদর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মা‘বাদ আল্ জুহানী কথা তোলেন । আমি (ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার) এবং হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান আল্ হিমায়রী হজ্জ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কা মুআয্যমায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সম্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম । সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর দেখা পাই । আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসলাম । আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি । আমি আরয করলাম, হে আবু আব্দুর রহমান! [আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রা)-এর কুনিয়াত ছিল আবু আব্দুর রহমান ।] আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে । .......... তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে ‘তাকদীর’ বলতে কিছুই নেই। সবকিছু তাৎণিকভাবে ঘটে ।
আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই । আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণের মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ্ তা কবুল করবেন না । তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবন খাত্তাব (রা) হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে ছিলাম । এমন সময় একজন আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন । তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে । তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না । আমরা কেউ তাঁকে চিনি না । তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তাঁর দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুই উরুর উপর রাখলেন । তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হলো, তুমি এ কথার স্যা প্রদান করবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের রোযা পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে । আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন । তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন আর তিনিই তা সত্যায়িত করছেন । আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশ্তাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাক্দীরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে । আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন । তারপর বললেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহ্সান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তো আমাকে দেখছেন । আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন । আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্রালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে । উমর ইবন খাত্তাব (রা) বললেন যে, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন । আমি বেশ কিছুণ অপেক্ষা করলাম । তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমর! তুমি জান, এই প্রশ্নকারী কে ? আমি আরয করলাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি জিব্রাঈল । তোমাদের তিনি দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন ।



মুসলিম-৫৮: হযরত আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ্কে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহ্ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে কবুল করেছে, সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ করেছে ।



বুখারী-৪১৪২: আবদান (র) .......... আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি আর একটি বললাম । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমকক্ষ স্থাপন করতঃ মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে । আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন না করা অবস্থায় মারা যায়, (তখন তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে ।



বুখারী-৫৮৬৭: মুয়ায ইবন আসাদ (র) .......... মাহমুদ (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা তাঁর স্মরণ আছে । আর তিনি বলেন, তাদের ঘরের পানির ডোল থেকে পানি মুখে নিয়ে তিনি তার মুখে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন সে কথাও তার স্মরণ আছে । তিনি বলেন, আতবান ইবন মালিক আনসারীকে, এরপর বনী সালিমের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে আমার এখানে এলেন এবং বললেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন ।



বুখারী-৬০৬৫: ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সুলায়মান (র) .......... আব্দুল্লাহ্ ইবন হিশাম (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম । তিনি তখন উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর হাত ধরেছিলেন । উমর (রা) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার প্রাণ ব্যতীত আপনি আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় । তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না ঐ মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এমনকি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও আমাকে অধিক প্রিয় হতে হবে । তখন উমর (রা) তাঁকে বললেন, এখন আল্লাহর কসম! আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর! এখন (তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে) ।



বুখারী-৬৩৫৯: মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন হাওশাব তায়েফী (র) .......... আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস এমন যার মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে । ১) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া । ২) কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসা । ৩) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করাকে অপছন্দ করে ।



বুখারী-৬৬৭০: মুহাম্মদ ইব্ন সিনান (র) .......... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে । তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে । তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করল ।


Tuesday, January 29, 2008

হাদীস সংকলনের ইতিহাস --- প্রথম যুগ

মোটকথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকে নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে শুরু না হলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে হাদীস সংরক্ষনের কাজ শুরু হয় । হিজরী প্রথম শতকের শেষ অবধি যে রচনাগুলো পাওয়া যায় তার বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলোঃ

১) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আমর ইবনুল আস (রা) যে নোট বইতে রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসগুলো লিপিবদ্ধ করেন তার নাম দেন তিনি ‘সহীফায়ে সাদেকাহ’ । এতে প্রায় এক হাজারটি হাদীস ছিল । দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁর পরিবারবর্গের কাছে তা সংরক্ষিত ছিল । বর্তমানে মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলের মধ্যে এর সবগুলো হাদীসই পাওয়া যাবে ।

২) হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর শ্রেষ্ঠ ছাত্র হাম্মাম ইবন মুনাব্বাহ (মৃত্যু ১০১ হিজরী) তাঁর রেওয়াতগুলো লিখে নিয়েছিলেন । এ গ্রন্থটির নাম হচ্ছে ‘সহীফায়ে সহীহা’ । এর হাতে লিখা পান্ডুলিপি বর্তমানে দামেশকে ও বার্লিনের লাইব্রেরীতে সংরতি রয়েছে । এ ছাড়া ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল তাঁর মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে আবু হুরায়রার রেওয়াত শিরোনামে এর সবগুলোই উদ্ধৃত করেছেন । এ সহীফাটি হচ্ছে হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসের একটি অংশ । এর অধিকাংশ হাদীস বুখারী ও মুসলিমে পাওয়া যাবে ।

৩) হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর একজন ছাত্র বশীর ইবন নুহাইকও তাঁর বর্ণিত হাদীসের আর একটি সংকলন করেন । বিদায় নেবার সময় তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর সামনে তা সম্পূর্ণ পাঠ করে তাঁর কাছ থেকে সত্যায়িত করে নেন ।

৪) সাহাবাদের আমলেই আবু হুরায়রার মুসনাদ নামে আর একটি গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়েছিল । হযরত উমর ইবন আব্দুল আজীযের পিতা মিসরের গভর্ণর আব্দুল আযীয ইবন মারওয়ানের (মৃত্যু ৮৬ হিজরী) কাছেও তাঁর একটি কপি ছিল । আব্দুল আযীয কাসীর ইবন মুররাকে লিখেন, “তোমার কাছে সাহাবায়ে কিরামের যে হাদীসগুলো আছে তা লিখিত আকারে আমার কাছে পাঠাও, তবে হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর রেওয়ায়াতগুলো ছাড়া । কারণ সেগুলো আমার কাছে লিখিত আকারে আছে ।” (তাবাকাতে ইবন সা’দ, ৭ম খন্ড, ১৫৭ পৃঃ উদ্ধৃতি ইন্তিখাবে হাদীস, আব্দুল গফ্ফার হাসান, ১৮ পৃঃ) ।

ইমাম ইবন তাইমিয়ার হাতে লিখা মুসনাদে আবু হুরায়রার একটি কপি বর্তমানে জার্মানীর লাইব্রেরীতেও সংরতি আছে ।

৫) হযরত আলী (রা) যে হাদীসগুলো লিখে রাখেন তার নাম দেয়া হয় ‘সহীফায়ে আলী’ ।

৬) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় যে দীর্ঘ ভাষণ দান করেন আবু শাহ ইয়ামানীর আবেদনক্রমে তা লিখিত আকারে তাঁকে দেয়ার নির্দেশ দেন । মানবতার অধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

৭) হযরত জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ (রা) এর রেওয়ায়াতগুলো তাঁর দু’ছাত্র ওহাব ইব্ন মুনাব্বাহ (মৃত্যু ১১০ হিজরী) ও সুলায়মান ইবন কায়েস লশকরী লিপিবদ্ধ করেন । এতে ছিল হজ্জের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বিদায় হজ্জের ভাষণ ।

৮) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা)-এর রেওয়ায়াতগুলো তাঁর ভাগ্নে ও ছাত্র উরওয়া ইবন যুবাইর লিপিবদ্ধ করে নেন ।

৯) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসগুলো বিভিন্নভাবে সংকলিত হয় । সাঈদ ইবন যুবায়ের তাবেঈর কাছে এর একটি সংকলন ছিল ।

১০) হযরত আনাস (রা)-এর কাছে হাদীসের একটি লিখিত সংকলন ছিল । সাঈদ ইবন হিলাল বলেন, হযরত আনাস (রা) নিজের হাতে লিখা সংকলনটি বের করে আমাদের দেখাতেন এবং বলতেনঃ এগুলো আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং এগুলো লিখে নেবার পর তাঁকে শুনিয়ে সত্যায়িত করেছি ।

১১) হযরত আমর ইবন হাযম (রা)-কে ইয়ামানে গভর্ণর করে পাঠাবার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো ২১ টি ফরমান সংযুক্ত করে বেশ বড় বিতাব বানিয়ে ফেলেন ।

১২) হযরত মাসুরা ইবন জুনদুব (রা)-ও তাঁর রেওয়ায়াতগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলেন । তাঁর পুত্র উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন । এটি ছিল হাদীসের একটি বিরাট সংকলন । ইবন হাজার আসকালানী তাঁর ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে এর উল্লেখ করেছেন ।

১৩) হযরত সা’দ ইবন উবাদাহ (রা) জহেলী যুগ থেকে লেখাপড়া জানতেন । তিনিও তাঁর রেওয়ায়াতগুলো লিপিবদ্ধ করে ফেলেন ।

১৪) তাবকাতে ইবন সা’দ সুলায়মান মুসার একটি উদ্ধুতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) বলে যেতেন এবং না’ফে তা লিখে নিতেন । হাদীসের এ সংকলনটির নাম ‘মাকতুবাতে হযরত না’ফে ।

১৫) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রা) তার রেওয়ায়াতগুলো লিখে ফেলেন । মা’আন বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা)-এর পুত্র আব্দুর রহমান আমার সামনে কিতাব বের করে কসম খেয়ে বলেন, এ হাদীসগুলো আমার পিতা আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদের লেখা ।

Sunday, January 27, 2008

হাদীস সংকলনের ইতিহাস

অহীয়ে মাতলু এর মাধ্যমে প্রাপ্ত কোরআন শরীফ জায়েদ ইবনে সাবেত (রা) প্রমুখ সুনির্দিষ্ট অহী লেখকদের সাহায্যে লিখিত করে রাখার ব্যবস্থা করা হলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ’অহীয়ে গায়েরে মাতলু’ দ্বারা প্রকাশিত হাদীস শরীফ লিখিত আকারে সংরতি করার তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না । তাও কোরআন শরীফ লিখিত হত বিচ্ছিন্ন ভাবে খেজুরের পাতা, চামড়া, হাড় ও কাঠ প্রভৃতি জিনিসপত্রের ওপরে । স্বভাবতঃ কোরআনের ঐ সব বিচ্ছিন্ন লিখিত অংশগুলো একালের বাঁধানো বইপত্রের মত সুদৃঢ়ভাবে গুছিয়ে বাঁধাই করে রাখা সম্ভব হত না । ফলে ঐ একই সময়ে একই পদ্ধতিতে হাদীস লেখার কাজ শুরু করা হলে কোরআন ও হাদীসের লিখিত অংশগুলো পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করার বা মিশ্রিত হওয়ার আশঙ্কায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় হাদীস লিখে রাখার কাজকে সাধারণভাবে নিষেধ করে দিয়েছিলেন এবং হযরত ওমর (রা)-ও হাদীস লিখে রাখার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন । কিন্তু কোন কোন বিশেষ সাবধানী সাহাবীর ক্ষেত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিষেধ কিছু পরিমাণ শিথিল করে দিয়েছিলেন এমন প্রমাণ দুর্লভ নয় ।

আবু হোরায়রা (রা) বলেছেন, ’এই সব হাদীস আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে শুনেছিলাম ও লিখে রেখেছিলাম এবং তাঁকে শুনিয়েছিলাম । আবু হোরায়রা (রা) ছাড়াও আরো অনেক সাহাবী যেমন আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা) ও হাদীস লিখে রাখতেন । আবু হোরায়রা (রা) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্নে আমর (রা)-এর কাছে বেশী হাদীস থাকতে পারে, কারণ তিনি হাদীস লিখে রাখতেন, আমি হাদীস লেখায় বিশেষ তৎপর ছিলাম না ।’ আমর (রা) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুযোগ করল যে সে হজরতের কাছে যা শুনছে তা স্মরণ রাখতে পারছে না । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার ডান হাতের সাহায্য নিতে বললেন (অর্থাৎ লিখে রাখতে বললেন) । হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা) ও কিছু কিছু হাদীস সংকলন করেছিলেন ।

মোট কথা সাধারণভাবে এবং ব্যাপকভাবে হাদীস লিখে রাখার কোন ব্যবস্থা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় প্রচলিত ছিল না । এ প্রসঙ্গে সহী বুখারীর বিখ্যাত টীকাকার আলকাস্তালানী বলেন, সাধারণতঃ সাহাবী বা তাবেয়ী কেউ হাদীস লিখে রাখতেন না । তাঁরা পরস্পরকে মৌখিক ভাবে হাদীস শিক্ষা দিতেন এবং অক্ষরে অক্ষরে তা কণ্ঠস্থ করে রাখতেন ।’ একদিকে সেকালের আরবদের স্মরণশক্তি যেমন প্রখরতর ছিল, অন্যদিকে তাদের মধ্যে অর জ্ঞানের অভাব তেমনি ভয়াবহভাবে ব্যাপকতর ছিল । কোরআনের সাথে হাদীসের সংমিশ্রন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার দ্বার রূদ্ভ করা এবং এই সব নিরক্ষর সাধারণ মানুষদের মধ্যে লেখার পরিবর্তে মৌখিক আকারেই হাদীসের প্রচার ও প্রসার সহজসাধ্য হবে ভেবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের কালে হাদীস লিখে রাখার কাজকে বিলম্বিত ও নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল ।

কিন্তু চলমান কাল একদিন হাদীস লিখে রাখার পথের সবচেয়ে বড় বাধাটা দুর করে দিল । খলীফা আবুবকর (রা) এর নির্দেশে সাহাবী জায়েদ ইবনে সাবেত (রা) কোরআন শরীফের যে পুর্ণাঙ্গ গ্রন্থটি সঙ্কলিত ও লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান (রা) তার অসংখ্য কপি প্রস্তুত করিয়ে সারা সাম্রাজ্যের দিকে দিকে মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করলেন । ফলে কোআন শরীফের ব্যাপক প্রচার সাধিত হল । কোরআনের নির্ভুল পাঠ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরে অন্তরে নুরের আখরে মুদ্রিত হয়ে গেল । এখন আর কোরআনের মধ্যে হাদীসের অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা রইল না । অন্যদিকে ইসলামী সাম্রাজ্যের ব্যাপাক প্রসার এবং অন্যান্য কারণজনিত ক্রমবর্ধমান জীবন-সমস্যার অস্বাভাবিক জটিলতার সমাধান পাওয়ার জন্য সমগ্র মুসলিম জগৎ পবিত্র হাদীস শরীফকে সঙ্কলিত আকারে পেতে একান্তভাবে উৎসুক হয়ে উঠল । কুফা, কায়রো, দামেস্ক প্রভৃতি লোকাকীর্ণ নগর গুলোর বিচার-কার্য পরিচালনার জন্য আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন হল ।’ কিন্তু ‘প্রত্যাদেশের (অর্থাৎ কোরআনের) অপরিসর’ আয়তনের মধ্যে সেই ব্যাখ্যা সহজলভ্য হল না । তাই সমস্যা সমাধানের জন্য হাদীসের আশ্রয় গ্রহণের কামনা বিশ্ব মুসলিমের অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রবলতর হয়ে উঠল ।

খোলাফায়ের রাশেদিনের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য নানা কারণে অজস্র জাল বা ‘মওজু’ হাদীস রচনায় লিপ্ত হওয়া, হাদীস শরীফকে লিখিত গ্রন্থের আকারে সংকলন ও সংরণ করার প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে উঠল । জাল হাদীসের জঞ্জালের তলায় আসল হাদীস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসল । গোঁড়া সুন্নী,শিয়া, খারেজী, মুতাজেলা, জিন্দিকও সুফী সম্প্রদায়ের বহু ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে তখন হাদীস প্রচার করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে । শিয়া মতাবলম্বীর একটি অংশ হযরত আলী (রা) বংশধরকেই খেলাফতের একমাত্র উত্তরাধিকারী বলে তাদের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিতান্ত উদ্দেশ্যমুলক ভাবে হাদীস উদ্ধৃত করতে শুরু করে । সুন্নী ও খারেজীরা ঠিক এর বিপরীত দাবীটাই বিভিন্ন হাদীস উদ্ধৃত করে প্রচার করতে শুরু করে । উদ্ধৃতিতে যেখানে আটছে না অত্যুৎসাহী অন্ধ সমর্থকেরা সেখানে মনের মত হাদীস নিয়ে নিজ নিজ বক্তব্যকে জোরদার করেছে । ওদিকে জিন্দিকরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে দ্বিত্ববাদী ন্বাধীনচেতা হয়ে উঠেছে । তারা আল্লাহর রসুলের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে । অন্য দিকে গ্রীক বিজ্ঞান-দর্শনের ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত মুতাজেলা সম্প্রদায় ঈমানের মুলশর্ত অস্বীকার করে ধর্ম- বিশ্বাসকে প্রমাণ ও বিচার সাপেক্ষ করে’ তুলল । তারা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের মত মানবিক অবয়ব বিশিষ্ট রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে আকাশ ভেদ করে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকে অসম্ভব বলে মনে করল এবং সেই যুক্তিতে ‘মে’রাজ’ বা ‘নভোভ্রমণ’কে অস্বীকার করল । তারা আল্লাহর সর্বময় একত্বের দোহাই দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত পালন করাকে সম্পুর্ণরুপে বর্জন করল । সার্বিক পরিস্থিতির এই ঘোলাপানিতে মৎস্য-শিকারের উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর পোষকতাকারী খলীফাদের দরবারের জাকজমক ও বাহ্যাড়ম্বরকে সমর্থন করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুচরদের অনাড়ম্বর জীবনের পুণ্যসমুহ মুছে দিতে লাগলো । উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য তাঁরা নানান মিথ্যা ও কল্পিত কাহিনী প্রচার করতে লাগলো । এসব তথ্যের প্রমাণ স্বরূপ তাঁরা নানান কল্পিত হাদীস তুলে ধরতে লাগলো । ফলে অসংখ্য ‘মওজু’ বা জাল হাদীসের আবির্ভাবে মুসলিম জগতের ভাগ্যাকাশ দুর্যোগের কালোমেঘে ঘনঘোর হয়ে উঠল ।

কিন্তু মেঘের আঁধারের পেছনেই সূর্যের আলোক প্রতীক্ষা করে । তাই এবার হাদীসের সংঙ্কটের ঘন অন্ধকার ভেদ করে’ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোক দিগন্ত রক্তিম করে জ্বলে উঠল । রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া এই সব মিথ্যা কথা বা জাল হাদীসের জঞ্জাল থেকে হাদীস-শাস্ত্রকে নিরাপদ ও নিষ্কণ্টক করার উদ্দেশ্যে এবং সমসাময়িক সুবিশাল মুসলিম-বিশ্বের বিচিত্র সমস্যার সমাধানকে হাদীসের মাধ্যমে সর্বত্র সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর ৮৯ বছর পরে হিজরী ৯৯ সনে উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ বা দ্বিতীয় ওমর হাদীস-সংকলনের কাজে উদ্যোগী হলেন । তিনি ছিলেন দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রা)-এর দৌহিত্রৈর পুত্র । আচারে ও আচরণে তিনি খলীফা ওমর (রা)-কেই অরে অরে অনুকরণ করতেন, তাই ইসলামের ইতিহাসে তিনি ‘দ্বিতীয় ওমর’ নামে বিখ্যাত । তিনি তাঁর-নিযুক্ত মদীনার গর্ভনর আবু বকর ইবনে হযমকে হাদীস সংকলনের কাজে অগ্রসর হবার জন্য আদেশ দিলেন । লিখলেন, ‘আমার আদেশ আপনি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক একটা হাদীস তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করুন এবং লিখে রাখুন । আমার ভয় হচ্ছে, এরকম না করলে একদিন এ জ্ঞানভান্ডার বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই জ্ঞানভান্ডারের রক সাহাবী ও তাবেয়ীগণ দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন । (বুখারী শরীফ)

ফলে এই হিজরী প্রথম শতাব্দীর প্রারম্ভ থেকেই হাদীস সমূহ গ্রন্থাকারে সংকলন করার ব্যাপক প্রয়াসের একটা বান ডেকে গেল । ঐতিহাসিক উইলিয়াম ময়ুর বলেন, ‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের প্রায় একশ বছর পরে খলীফা দ্বিতীয় ওমর প্রচলিত হাদীসগুলোকে সংগ্রহ ও সঙ্কলিত করার জন্য একটা বৃত্তাকার আদেশ দিলেন । এইভাবে যে কাজের সুত্রপাত হল, প্রবল বেগে তা অগ্রসর হতে লাগল ।আল্লাহর অনেক নেক বান্দারা এই হাদীস সংগ্রহ করার জন্যে তাঁদের ‘জীবন যৌবন ধন-মান’ সব কিছু উৎসর্গ করে দিলেন । আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।

হাদীসের বর্ণনাগত প্রকারভেদ

nv`xm wekvi`MY eY©bvMZfv‡e nv`xmg~n‡K wewfbœ †kªYx‡Z wef³ K‡i‡Qb| wb‡gœ avivevwnKfv‡e †m¸‡jv D‡j­L Kiv n‡jvt

  • Le‡i gyZvIqvwZi t †mme nv`xm‡K Le‡i gyZvIqvwZi ejv nq, cÖwZwU hy‡MB †h nv`xm¸‡jvi eY©bvKvix‡`i msL¨v wQj G‡Zv AwaK hv‡`i wg_¨vPv‡ii g‰ZK¨ nIqv ¯^vfvweKfv‡eB Am¤¢e|
  • Le‡i Iqvwn` t †mme nv`xm‡K Le‡i Iqvwn` e‡j, †h¸‡jvi eY©bvKvix‡`i msL¨v gyZvIqvwZi ch©v‡q †cuŠQvqwb| nv`xm wekvi`MY Gi“c nv`xm‡K wZbfv‡M fvM K‡i‡Qb t
    • gkûit eY©bvKvix mvnvexi c‡i †Kv‡bv hy‡M †h nv`x‡mi eY©bvKvixi msL¨v wZ‡bi Kg wQj bv|
    • Avhxet †h nv`x‡mi eY©bvKvix msL¨v †Kv‡bv hy‡MB `yB-Gi Kg wQj bv|
    • Mixet hvi eY©bvKixi msL¨v †Kv‡bv †Kv‡bv যু‡M G‡K G‡m †cuŠ‡Q‡Q|
  • gvidz t †h nv`x‡mi eY©bvm~Î (mb`) ivm~jyj­vn mvj­vj­vû AvjvBwn Iqvmvj­vg ch©š— †cuŠ‡Q‡Q Zv‡K nv`x‡m gvid~Õ e‡j|
  • gvIKzd t †h nv`x‡m eY©bv ci¯úiv (mb`) mvnvex ch©š— G‡m ¯’wMZ n‡q †M‡Q Zv‡K nv`x‡m gvIKzd e‡j|
  • gvKZz t †h nv`x‡mi mb` Zv‡eqx ch©š— G‡m ¯’wMZ n‡q‡Q Zv‡K gvKZz e‡j|
  • gyËvwmj t ïi“ †_‡K †kl ch©š— Dci †_‡K wbP ch©š— †h nv`x‡mi mb` ev eY©bvKvix‡`i avivevwnKZv m¤ú~Y© A¶zbœ †_‡K‡Q Ges †Kvb ch©v‡q †Kvb eY©bvKvix Aby‡j­wLZ _v‡Kwb Giƒc nv`xm‡K nv`x‡m gyËvwmj e‡j|
  • gybKvwZ t †h nv`x‡mi eY©bvKix‡`i avivevwnKZv A¶zbœ bv †_‡K gvSLvb †_‡K †Kv‡bv eY©bvKvixi bvg Dn¨ ev jyß i‡q †M‡Q Zv‡K nv`x‡m gybKvwZ e‡j|
  • gyqvj­vK t †h nv`x‡mi †MvUv mb` ev cÖ_g w`‡Ki mb` Dn¨ _‡K Zv‡K nv`x‡m gyqvj­vK e‡j|
  • gyÕ`vj t †h nv`x‡m avivevwnKfv‡e `yB ev Z`ya©© eY©bvKvix Dn¨ _v‡K Zv‡K gyÕ`vj e‡j|
  • kvh t H nv`xm‡K kvh e‡j hvi eY©bvKvix wek¦¯— e‡U, wKš‘ nv`xmwU Zvi PvB‡Z AwaK wek¦¯— eY©bvKvixi eY©bvi wecixZ|
  • gybKvi I gvÕiƒd t †Kvb `ye©j eY©bvKvix hw` †Kvb wek¦¯— eY©bvKvixi eY©bvi wecixZ nv`xm eY©bv K‡i, Z‡e `ye©j eY©bvKvixi nv`xm‡K ÔgybKviÕ Ges wek¦¯— eY©bvKvixi nv`xm‡K gvÕiƒd e‡j|
  • gyqvj­vj t †h nv`x‡mi mb‡` Ggb my¶è ΓwU _v‡K hv †Kej nv`xm wekvi`MYB ciL Ki‡Z cv‡ib| G ai‡bi my¶ ΓwUc~Y© nv`xm‡K gyqvj­vj e‡j|
  • mnxn t †h nv`x‡mi mb‡` wb‡gœv³ ˆewkó¨mg~n _v‡K, Zv‡K mnxn nv`xm e‡j t 1) gyËvwmj mb`, 2) wek¦¯— I wbf©i‡hvM¨ eY©bvKvix 3) ¯^”Q ¯§iYkw³ 4) kvh bq Ges 5) gyqvj­vj bq|
  • mb` I gZb t (............)

Saturday, January 26, 2008

হাদীসের প্রকারভেদ


হাদীসমূহকে সংজ্ঞাগত, বর্ণনাগত এবং বিষয় বস্তুগতভাবেও ভাগ করা হয়েছে ।


সংজ্ঞাগতভাবে মুখ্যত হাদীস তিন প্রকার--

১) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখনিঃসৃত কথা বা বাণীকে ‘কওলী’ হাদীস বলা হয় ।

২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ, কর্মপন্থা ও বাস্তব আচরণকে ‘ফিইলী’ হাদীস বলা হয় ।

৩) আর তা সমর্থন ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বিষয়গুলোকে বলা হয় ‘তাকরীরী’ হাদীস ।

হাদীস ও সুন্নাহ

‘সুন্নাহ’ শব্দের অর্থ হলো কর্মপন্থা, কর্মপদ্ধতি, কর্মনীতি ও চলার পথ । উসুলে হাদীসের পরিভাষায় রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসৃত কর্মপন্থা ও কর্মনীতিকে ‘সুন্নাহ্’ বলা হয় ।

প্রাচীন উলামায়ে কিরাম হাদীস এবং সুন্নাহর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য করেননি । অতীতে মুহাদ্দিসগণ উভয় শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করতেন ।

তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এতোটুকু যে, ‘হাদীস’ হলো রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ, সমর্থন ও পরিবেশের বিবরন আর ‘সুন্নাহ’ হলো রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসৃত সার্বিক নীতি ও কর্মপন্থা । হাদীস ভান্ডারের মধ্যেই ছড়িয়ে আছে সুন্নাতে রাসূল ।

Friday, January 25, 2008

হাদীস কাকে বলে?

হাদীস শব্দের আভিধানিক অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, বিষয়, অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি ।

পারিভাষিক ও প্রচলিত অর্থে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ, সমর্থন, আচরণ এমনকি তাঁর দৈহিক ও মানসিক কাঠামো সংক্রান্ত বিবরণকেও হাদীস বলে ।

সাহাবায়ে কিরামের কথা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস বলা হয় । অবশ্য পরে উসুলে হাদীসে তাঁদের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘আসার’ এবং হাদীসে মওকুফ’ এবং তাবেয়ীগণের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফতোয়া’ ।

মানুষ কিভাবে কুরআন অনুযায়ী জীবন যাপন করবে? কিভাবে সে তার ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগ পরিচালনা করবে? আর কিভাবেই বা সে কুরআনের আদর্শে নৈতিক কাঠামো এবং সমাজ কাঠামো গড়ার চেষ্টা সাধনা করবে? এসকল বিষয়েই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন । তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এসব বিষয়ে কর্মনীতি কর্মপন্থা অবলম্বন করে দেখিয়েছেন, শিখিয়েছেন, জানিয়েছেন এবং বাস্তবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ
“জেনে রাখো, আমাকে আল কুরআন দেয়া হয়েছে আর সেই সাথে দেয়া হয়েছে অনুরূপ আরেকটি জিনিস ।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্)


কোরআন ও হাদীসের পার্থক্য
কোরআন আল্লাহ্ তা‘লার বাণী, হাদীস আল্লাহর রসুলের বাণী । কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে অহী মাধ্যমে, হাদীস শরীফেরও মূলে রয়েছে সেই একই অহী । কিন্ত পার্থক্য এই যে, কোরআনের ভাব ও ভাষা (Text) দুইই অক্ষরে অক্ষরে আল্লাহ্ তা’আলার কাছ থেকে অহী মারফৎ প্রাপ্ত, যা নামাজের মধ্যে মুসলমানগণ কর্তৃক পাঠ বা তেলাওয়াত করা হয় । তাই কোরআন মাজিদকে অহীয়ে মাতলু বা পঠিত প্রত্যাদেশ! (Inspired Revelation) বলা হয় । কিন্ত হাদীসের বিষয়স্তু (ভাব অর্থ) আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে অহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হলেও জিব্রাঈল (আ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তা পঠিত হয়নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সেই পাঠ অবিকল সেই শব্দ বাক্য বিন্যাস সমেত প্রচার করেননি । তাই হাদীস শরীফকে অহীয়ে গায়েরে মাতলু বা অপঠিত প্রত্যাদেশ (Uninspired Revelation) বলা হয় । অহীয়ে গায়রে মাতলুর ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রত্যাদেশ প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তরে আসে -- পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ দিয়ে তা তার নিজের ভাষায় প্রকাশিত হয়, আল্লাহ্ তা’আলার ভাষায় নয় ।