Wednesday, January 23, 2008

হাদীসে রাসূল ---প্রাসংঙ্গিক কিছু কথা

ইসলাম একটি জীবন দর্শন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা । এর যাবতীয় বিষয় গড়ে উঠেছে কুরআন ও সুন্নাহ্ উপর । কুরআন আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর দূত জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সরাসরি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর সুন্নাহ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা বা পদ্ধতি । কুরআনের নির্দেশগুলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রীয় তথা সামগ্রীক পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা-ই হচ্ছে সুন্নাহ এবং এ সুন্নাহকে জানার বাস্তব মাধ্যমই হচ্ছে হাদীস । এ জন্য হাদীসকে এক পর্যায়ে কুরআনের বিস্তারিত রূপ এবং ব্যাখাও বলা হয় । কুরআন ও হাদীস এ দুটি সম্মিলিতভাবে দীন ইসলামকে পূর্ণতা দান করেছে। কুরআনে বলা হয়েছেঃ
“তিনি হিদায়াত ও সত্য জীবন ব্যবস্থা সহকারে তাঁর রাসুলকে পাঠিয়েছেন দুনিয়ার অন্য সমস্ত জীবন ব্যবস্থার উপর তাকে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (তওবাঃ ৩৩)
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে শুধুমাত্র হিদায়াত ও সত্য জীবন ব্যবস্থা পাঠিয়েই ক্ষান্ত থাকা হয়নি বরং এ হিদায়াত ও সত্য জীবন ব্যবস্থাকে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বও তাঁর উপর অর্পিত হয়েছে। আবার এ প্রসঙ্গে কুরআনে আরো বলা হয়েছে-
“রাসূল তোমাদের কাছে যা কিছু এনেছে তা গ্রহণ কর আর যা কিছু থেকে তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ কর ।” (আল হাশরঃ ৭)

এখানেও মূলতঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই আল্লাহর বিধানের একমাত্র মাধ্যম গণ্য করা হয়েছে । এ জন্য রাসুলের সবরকমের কথা ও কাজকে ইসলামী বিধানের বাস্তব রূপ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে । যা আল্লাহ্ তায়ালা সরাসরি রাসূলের নিকট পাঠিয়েছেন এবং রাসুল তার যে ব্যাখ্যা করেছেন অথবা বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে যে কার্যকর রূপ দিয়েছেন, তা সবই ইসলামী জীবন বিধানের অন্তর্ভুক্ত ।

কুরআনে অন্যত্র আরো সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে, রাসূলকে শুধুমাত্র কুরআন দেয়া হয়নি বরং কুরআনের সাথে সাথে হিকমতও দান করা হয়েছে । এ হিকমতের মাধ্যমে তিনি লোকদেরকে কুরআনের বাস্তব প্রশিণ দেবেন ।

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে একজনকে তাদের কাছে নবী করে পাঠিয়েছেন, যে আল্লাহ্ তাআলার আয়াতগুলো তাদের সামনে পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিখায়, যদিও ইতিপূর্বে তারা সুস্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত ছিল ।” (আলে-ইমরানঃ ১৬৪)
এ আয়াতের প্রেক্ষিএত দেখা যায় কিতাব ছাড়া আর একটি বস্তুও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দান করা হয় সেটি হিকমত তথা কিতাবকে বাস্তবায়িত করার পদ্ধতি। সুরা আন নজমে বলা হয়েছে-
“তিনি (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন না । যা কিছু তিনি বলেন তা সবই আল্লাহর অহী ।” (৩-৪)

এ সব আলোচনা থেকে যে কথাগুলো সুস্পষ্ট হয়েছে তা হচ্ছে
১. আল্লাহ্ তাঁর বিধান অর্থাৎ কুরআন মজীদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠিয়েছেন ।

২. রাসূল সেই বিধানকে পৃথিবীতে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ।

৩. এ প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে রাসূল যা কিছু করেছেন এবং বলেছেন সবই যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালার সরাসরি তত্ত্ববধানে নিয়ন্ত্রিত, তাই তার সবই গ্রহণ করতে হবে ।


রসূলের নবুয়াতী জীবনের তেইশ বছরের এ কাজগুলোকে সুন্নাহ বলা হয় । সুন্নাহর বিস্তারিত চিত্র আমরা হাদীস গ্রন্থগুলোতে পাই ।

No comments: