Sunday, February 3, 2008

ঈমান, ঈমানের তাৎপর্য এবং মু’মীনের বৈশিষ্ট্য

মুসলিম-১ : আবু খায়সামা যুহায়র ইব্ন হারব (র) .......... ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার (র) থেকে বর্ণনা করেন । তিনি (ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার) বলেন, সর্বপ্রথম ‘কাদর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মা‘বাদ আল্ জুহানী কথা তোলেন । আমি (ইয়াহইয়া ইব্ন ইয়া‘মার) এবং হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান আল্ হিমায়রী হজ্জ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কা মুআয্যমায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সম্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম । সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর দেখা পাই । আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসলাম । আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি । আমি আরয করলাম, হে আবু আব্দুর রহমান! [আব্দুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রা)-এর কুনিয়াত ছিল আবু আব্দুর রহমান ।] আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে । .......... তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে ‘তাকদীর’ বলতে কিছুই নেই। সবকিছু তাৎণিকভাবে ঘটে ।
আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রা) বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই । আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণের মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ্ তা কবুল করবেন না । তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবন খাত্তাব (রা) হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে ছিলাম । এমন সময় একজন আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন । তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে । তাঁর মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন ছিল না । আমরা কেউ তাঁকে চিনি না । তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তাঁর দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুই উরুর উপর রাখলেন । তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হলো, তুমি এ কথার স্যা প্রদান করবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের রোযা পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে । আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন । তার কথা শুনে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করছেন আর তিনিই তা সত্যায়িত করছেন । আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশ্তাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাক্দীরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে । আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন । তারপর বললেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহ্সান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তো আমাকে দেখছেন । আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন । আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্রালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে । উমর ইবন খাত্তাব (রা) বললেন যে, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন । আমি বেশ কিছুণ অপেক্ষা করলাম । তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমর! তুমি জান, এই প্রশ্নকারী কে ? আমি আরয করলাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি জিব্রাঈল । তোমাদের তিনি দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন ।



মুসলিম-৫৮: হযরত আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহ্কে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহ্ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে কবুল করেছে, সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত স্বাদ লাভ করেছে ।



বুখারী-৪১৪২: আবদান (র) .......... আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি আর একটি বললাম । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমকক্ষ স্থাপন করতঃ মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে । আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন না করা অবস্থায় মারা যায়, (তখন তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে ।



বুখারী-৫৮৬৭: মুয়ায ইবন আসাদ (র) .......... মাহমুদ (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা তাঁর স্মরণ আছে । আর তিনি বলেন, তাদের ঘরের পানির ডোল থেকে পানি মুখে নিয়ে তিনি তার মুখে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন সে কথাও তার স্মরণ আছে । তিনি বলেন, আতবান ইবন মালিক আনসারীকে, এরপর বনী সালিমের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে আমার এখানে এলেন এবং বললেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে কিয়ামতের দিন হাজির হবে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন ।



বুখারী-৬০৬৫: ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সুলায়মান (র) .......... আব্দুল্লাহ্ ইবন হিশাম (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম । তিনি তখন উমর ইবন খাত্তাব (রা)-এর হাত ধরেছিলেন । উমর (রা) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার প্রাণ ব্যতীত আপনি আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় । তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না ঐ মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এমনকি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও আমাকে অধিক প্রিয় হতে হবে । তখন উমর (রা) তাঁকে বললেন, এখন আল্লাহর কসম! আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর! এখন (তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে) ।



বুখারী-৬৩৫৯: মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন হাওশাব তায়েফী (র) .......... আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস এমন যার মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে । ১) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া । ২) কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসা । ৩) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করাকে অপছন্দ করে ।



বুখারী-৬৬৭০: মুহাম্মদ ইব্ন সিনান (র) .......... আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে । তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে । তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করল ।